পারমানবিক বা নিউক্লিয়ার বোমার আদ্যোপান্ত।।

পারমানবিক বা নিউক্লিয়ার বোমা,এটম বোম বা হাইড্রোজেন বোমা এসব নামগুলোর সাথে মুটামুটি আমরা সবাই ছোটবেলা থেকে পরিচিত। সাধারণ যেকোন বোমার চেয়ে এগুলা বহুগুনে শক্তিশালী ও ভয়ংকর,এইটুকু ধারনা অনেকের থাকলেও এই ছোট আর্টিকেলে এ সম্পর্কে আরেকটু ধারনা খুব সহজভাবে দেয়ার চেষ্টা করব। তাহলে শুরু করা যাক-উপরে যেসব বোমার কথা বলা হয়েছে সেগুলোর মূলনীতি এক।নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া ঘটে এসব বোমা বিষ্ফোরনে।নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া দুই ধরনের:১. ফিউশন বিক্রিয়াঃ দুটি নিউক্লিয়াস মিলিত হয়ে একটি নিউক্লিয়াসে পরিনত হয় এই বিক্রিয়ায়।সূর্য একটি বড় উদাহরণ, যেখানে দুটি হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস মিলিত হয়ে হিলিয়াম নিউক্লিয়াসে পরিনত হয়।তখন বিপুল পরিমানে শক্তি নির্গত হয় যা পৃথিবী পর্যন্ত চলে আসে,যেই শক্তির প্রভাবে পৃথিবী এখনো টিকে আছে!আর নির্গত হওয়া সেই শক্তিই আসলে সূর্যের শক্তির প্রধান ও একমাত্র উৎস!২. ফিশন বিক্রিয়াঃ এটা ফিউশনের ঠিক উলটো।একটা নিউক্লিয়াস ভেঙে একাধিক নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়!এই বিক্রিয়ায়ও বিপুল পরিমানে শক্তি নির্গত হয়।তার মানে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া তা হোক ফিশন বা ফিউশন সেখান থেকে বিপুল পরিমান শক্তি নির্গত হয়,যার ব্যাখ্যা আইন্সটাইনের বিখ্যাত ভরশক্তি সূত্র(E=mc^2) থেকে পাওয়া যায়! আরেকটা কথা বলে নেয়া ভাল যে এসব নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া একবার শুরু হলে চেইন বিক্রিয়ার মত চলতেই থাকে যা একটা থেকে দুটো, দুটো থেকে চারটি, এরপর আটটি এভাবে বাড়তেই থাকে! ফলে উৎপন্ন শক্তিও মূহুর্তের মধ্যেই শুধু বাড়তেই থাকে।যাই হোক, এবার বোমার কথায় আসা যাক! নিউক্লিয়ার বোমাও তাই দুই প্রকারের হতে পারে, হয় এতে ফিশন, না হয় ফিউশন বিক্রিয়া ঘটবে। ফিশন বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্লুটোনিয়াম বা ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়, আর ফিউশনের জন্য হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হয়। তাই হাইড্রোজেন বোমা বললে আমরা বুঝব সেখানে হাইড্রোজেনের ফিউশন ঘটবে বিষ্ফোরনে!এখানে বলে রাখা ভালো, ফিউশন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি ফিশনে উৎপন্ন শক্তির চেয়ে ১০০০ গুন বেশি!! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে দুটি বোমা ফেলা হয়েছিল যার দুটিই ফিশন বোমা, একটিতে ইউরেনিয়াম এবং পরেরটিতে প্লুটোনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছিল। এতে তাৎক্ষণিকভাবে ১,২০,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল, পরে তেজষ্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হয়ে আরো লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়।এখনো ওই এলাকায় তেজষ্ক্রিয়তার ফলাফল বিদ্যমান!কিছুদিন আগেও উত্তর কোরিয়া হাইড্রোজেন বোমার(ফিউশন) পরীক্ষা চালিয়েছে যা কিনা ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোসিমা বা নাগাসাকিতে আঘাত করা বোমার চেয়ে ১০০০ গুন বেশি শক্তিশালী (কারন উপরে বলা হয়েছে)! তাই সহজেই অনুমান করা যায় যে, হাইড্রোজেন বোমার বিষ্ফোরনের ভয়াবহতা কি হতে পারে! আধুনিক এক হাজার কিলোগ্রামের একটি হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরন ক্ষমতা প্রচলিত প্রায় ১ বিলিয়ন কিলোগ্রামের প্রচণ্ড বিস্ফোরক দ্রব্যের চেয়েও বেশি!নিউক্লিয়ার বোমার বিষ্ফোরনে তাৎক্ষণিকভাবেই প্রচন্ড শক ওয়েভের ফলে থার্মাল এফেক্টে শরীর ছাড়খার হয়ে যাবে। বিষ্ফোরনে যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় তা দীর্ঘমেয়াদে প্রানীজগতের উপর নানা প্রভাব ফেলে।অনেক ধরনের রোগ ব্যাধি এবং সর্বশেষ ক্যান্সার হতে পারে এই তেজস্ক্রিয়তায়। যুগের পর যুগ ধরে এই তেজস্ক্রিয়তা থেকে যেতে পারে তাই ওই এলাকায় বহু বছর পরেও মানুষ ওই বিষ্ফোরনের তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হতে পারে। ছোট-খাটো একটি বোমার বিষ্ফোরন শত কিলোমিটার অনায়াসেই ছড়িয়ে পড়তে পারে, ধবংস করে দিতে পারে যেকোনো অভিজাত শহর চোখের নিমিষেই! মানুষ সেই তেজস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচার কোন সুযোগ পাবে না! মাটির নিচে, পানির তলায় বা দালানের মধ্যে কোথাও সে নিরাপদে থাকতে পারবে না, কারন মুহুর্তেই তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে যাবে আশে-পাশের সব কিছুতেই! আর বিষ্ফোরনের উচ্চ চাপে মুহূর্তেই গুড়িয়ে যাবে বহুতল সব দালানকোঠা! বর্তমানে আটটি দেশ #রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর কোরিয়া, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তানে# নিউক্লিয়ার বোমার মজুদ আছে।অন্যদিকে ইরান আর ইসরায়েলেও এসব বোমা মজুদ আছে বলে ধারনা করা হয় যদিও তা স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করেনি দেশ দুটি। এখন পর্যন্ত ৫০০ বারের অধিক পরীক্ষামুলক বিষ্ফোরন ঘটিয়েছে দেশগুলো। বর্তমানে দেশেগুলোর কাছে নয় হাজারের মত বোমা মজুদ আছে যা দিয়ে পুরো পৃথিবীকে ৩৮ বার ধবংস করা সম্ভব! একেকটি ছোটখাটো বোমা যেকোনো বড় শহর ধবংস করে দিতে সক্ষম।আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে এখন যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তাতে রসদ জোগাচ্ছে তাদের নিউক্লিয়ার(পারমানবিক) শক্তি।সামরিক শক্তিতে ভারত চতুর্থ আর পাকিস্তানের সতেরোতম (নিউক্লিয়ার শক্তি ব্যতিত) হলেও (গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ২০১৮ এর প্রতিবেদন) নিউক্লিয়ার শক্তিতে দুটি দেশই সমানে সমান! ভারতের ১৩০-১৪০ টি অন্যদিকে পাকিস্তানের ১৪০-১৫০ টি নিউক্লিয়ার বোমার মজুদ আছে। নিউক্লিয়ার বোমার উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি রয়েছে যেখানে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স,অষ্ট্রেলিয়ার সই থাকলেও ভারত বা পাকিস্তান সেই চুক্তিতে সই করেনি! যদিও নিউক্লিয়ার অস্ত্র যেকোন দেশের জন্য একটি মর্যাদা ও ভরষার নাম, তবুও কোন দেশ এই অস্ত্র ব্যবহার করতে চাইবে না, কারন এই অস্ত্রের যুদ্ধ ও ব্যবহার হবে আত্মবিনাশী! **************************বি,দ্রঃ এই গ্রুপের পোস্ট ভালো লাগলে গ্রুপটিকে লাইক করুন, ফলো করুন। আরো নতুন নতুন পোস্ট দিতে উৎসাহ দিন।**************************তথ্যসূত্রঃ 1.https://en.m.wikipedia.org/…/Atomic_bombings_of…2.https://www.ctbto.org/nuclear…/types-of-nuclear-weapons/3.https://www.un.org/disarmament/wmd/nuclear/4.https://www.bbc.com/bengali/news-473687685.https://www.aljazeera.com/…/hydrogen-bomb-atomic-bomb…(লিখায় কোন ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ রইল,ধন্যবাদ সবাইকে)সংগৃহীত

পারমানবিক বোমা
পারমানবিক বোমা
পারমানবিক বোমা

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *