মৌমাছির হুল ফোটালে আমাদের করনীয়।।

মৌমাছির হুল……. কতটা বিষাক্ত? মৌমাছির বিষক্রিয়া মানুষের ওপর কতটা হবে, তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপর। অর্থাৎ তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন, তার অ্যালার্জি আছে কি-না, মৌমাছি কতক্ষণ ধরে হুল ফুটিয়েছে – এসবের ওপর।মের্ক ম্যানুয়ালের জরিপ মতে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হাজার খানেক মৌমাছির হুল খেলে মারা যেতে পারে ৷ তার বিষ এতই দুর্বল ! “তবে কারও শরীরে যদি, ধরা যাক বাংলাদেশের সরিষা-ক্ষেতে হওয়া মৌমাছির যে আকার, তার ৫০০ মৌমাছি হুল ফোটায়, তাহলে রক্তে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু ঘটতে পারে।”আবার ৪০-৫০টি মৌমাছির হুলে যে পরিমান বিষ থাকে, তা একটি শিশুর মৃত্যু ঘটাতে পারে। মৌচাকে ঢিল না পড়লে সাধারণত মৌমাছি আক্রমণ করে না। মৌমাছি তার সৈন্যবাহিনীকে সংকেত দেওয়ার জন্য ফেরোমন ব্যবহার করে। এই ফেরোমন মৌমাছির অস্ত্র হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।প্রাপ্ত সংকেতের মাধ্যমে বাকি মৌমাছিগুলো হুল ফোটায়। এই হুল কতটা বেদনাদায়ক হতে পারে ভুক্তভোগী মাত্রই বুঝতে পারে। মৌমাছির বিষে শতকরা ৮৮ ভাগ পানি থাকে। এই পানির কারণে প্রাণিদেহের আর্দ্র কোষের ভেতর বিষ দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে। ফেরোমন ব্যতীত মৌমাছির বিষ হচ্ছে গন্ধহীন তরল যার pH হচ্ছে ৪.৫-৫.৫। অর্থাৎ কিছুটা এসিড ধর্মী। তাই অনেকে মৌমাছি হুল ফোটালে খাবার সোডার পেস্ট দিতে বলেন। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতির কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দিহান। কারণ মৌমাছির বিষ কলার অভ্যন্তরে কাজ করে।মৌমাছির দংশনে ব্যথার জন্য অন্যতম উপাদানটি হচ্ছে মেলিটিন (Melittin)। এই উপাদান বিষের শুষ্ক ওজনের শতকরা ৫০ ভাগ থাকে। মেলিটিন দংশনের স্থানের লোহিত রক্তকণিকাকে ভেঙে ফেলে এবং রক্তনালীকে প্রসারিত করে। রক্তনালীর প্রসারণের জন্য অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তচাপ কমে যায়।মেলিটিন ছাড়াও ফসফোলাইপেজ এ২ (Phospholipase A2) নামক প্রোটিন থাকে যা কোষ আবরণী ধ্বংস করে। এটি ব্যথা ও প্রদাহ কারণ। বিষের শতকরা ৯ ভাগ হচ্ছে হিস্টামিন। যার প্রভাবে কৈশিকনালীর ভেতর থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে। এ কারণেই মৌমাছি কামড়ালে চুলকানির ন্যায় লাল বিন্দু দেখা যায়।বিষের বিষক্রিয়া বৃদ্ধি করার জন্য কিছু উপাদান রয়েছে। অ্যাপামিন হচ্ছে এমনই একটি উপাদান। এটি স্নায়ুকলাকে ধ্বংস করে। এছাড়াও বিষে থাকা হায়ালুরোনিডেজ এনজাইম ব্যথার অনুভূতিকে আশপাশের কোষকলায় বহন করে নিয়ে যায়।সাধারণত স্ত্রী মৌমাছি হুল ফোটাতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মৌমাছির হুল ডিমপাড়া অঙ্গের (Ovipositor) বিশেষ ধরনের পরিবর্তনের মাধ্যমে গঠিত হয়। হুলটি স্বনিয়ন্ত্রিত মিসাইলের মতো কাজ করে। আক্রান্ত প্রাণির দেহে হুল ফোটানোর জন্য খুব বেশি চাপ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।সাধারণত বিপদাপন্ন না হলে হুল ফোটায় না। কারণ যে মৌমাছি হুল ফোটায় তা মারা যায়। এরা হুল তুলে নিতে পারে না। হুলের সঙ্গে পাকস্থলীর বেশকিছু অংশ ছিড়ে বেরিয়ে আসে।মৌমাছি তার কোসেভনিকভ (Koschevnikov) গ্রন্থি থেকে ফেরোমন নিঃসরণ করে। এই সংকেত পেলে বাকি মৌমাছিরা দ্রুত সেখানে ছুটে যায়। এ কাউকে মৌমাছি কামড়ালে সেখানে ধোঁয়া ছাড়তে হয়। ধোঁয়ার গন্ধ ফেরোমনের গন্ধকে নষ্ট করে দেয়।মৌমাছি চাষকারীদের কাছে মৌমাছি খুবই বিপদজনক। এ কারণে তাদের নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়। মৌমাছির হুল আঙুল ও চিমটা দিয়ে তোলার চেষ্টা না করাই ভালো। এর পরিবর্তে ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করতে পারেন।একবার মৌমাছি হুল ফোটালে শরীরের যাবতীয় রাসায়নিক উপাদানগুলো বিষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কারণ শরীর অপরিচিত প্রোটিনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেই। অতিরিক্ত সংবেদনশীল ব্যক্তিরা অধিক ব্যথা অনুভব করেন।মৌমাছির দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি অ্যানাফাইল্যাক্সিসের কারণে মারাও যেতে পারেন। তাই আক্রান্ত মানুষ ও প্রাণিকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিৎ। আক্রান্ত ব্যক্তির কিডনি কয়েক সপ্তাহ ধরে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে।মৌমাছির বিষ মারাত্মক ও ভয়ঙ্কর হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এই বিষকে নানা রকম চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করেন। মাঝে মধ্যে গুটি কয়েক এমনকি একটা মৌমাছির হুল খেয়েও মরার কথা শোনা যায় ৷ তাহলে ব্যাপারটা কী ?ব্যাপারটা হলো ভেনম অ্যালার্জি বা অ্যানাফাইল্যাক্সিস রোগ ৷ দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মাঝে মধ্যে ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে ৷ **সাধারণত মৌমাছি হুল ফোটালে যাদের অ্যালার্জি নেই তাদের এই সব লক্ষণ দেখা দেয় -১. এক-দুই ঘণ্টা ধরে ভয়ানক ব্যথা ৷২. তারপর চুলকানি শুরু হবে ৷৩. সাদাটে গোলাকার দাগ ও এর চারদিক লালচে ৷৪. হালকা ব্যথা, চুলকানি ও লালচে দাগ সাত দিন পর্যন্ত থাকতে পারে ৷ **তবে যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের এই লক্ষণ দেখা দেবে– ১. হুল ফোটার দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ৷২. মুখে ও পরে শরীরের অন্য জায়গায় লালচে ফোলা ফোলা দাগ দেখা দেয়, সাধারণ অ্যালার্জি হলে যেমন দাগ হয় ৷৩. মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, জ্ঞান হারানো, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট ও গিলতে সমস্যা হওয়া ৷৪. চোখ, ঠোঁট ফুলে যাওয়া ৷তীব্র অ্যানাফাইলেটিক রিঅ্যাকশন মৃত্যু ঘটাতে পারে এবং এর জন্য একটার দংশনই যথেষ্ট ৷

মৌমাছি
মৌমাছি

সাধারণত মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল বা কিছু জাতের পিঁপড়ার কামড়, লেটেক্স কাপড়, কিছু ঔষধের, কিছু খাবারের প্রভাবে অ্যানাফাইলেটিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে ৷ দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেহকে প্রতিরক্ষা করতে গিয়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে অতিরিক্ত কার্যকলাপ শুরু করলে এই রোগ দেখা দেয় ৷যাদের অতিরিক্ত অ্যালার্জির সমস্যা তাদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে ৷মৌমাছি বা বোলতা কামড়ালে করণীয়–১. মৌমাছি বা বোলতা হুল ফুটিয়ে বসে থাকলে তা তুলে ফেলুন। এরা সাধারণত ত্বকের সঙ্গে একই সমতলে আঁকড়ে ধরে থাকে। তাই সরানোর জন্য ধীরে ধীরে এদের ওপরে এবং পাশে আঙুল বোলান, তার পর আচমকা ঠেলে ফেলে দিন।২. খামচে বা চিমটি কেটে মৌমাছি অথবা বোলতাকে তোলার চেষ্টা করবেন না। কারণ এর ফলে বিষের থলি থেকে সমস্ত বিষ বেরিয়ে পড়বে এবং হুলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করবে। তাই খামচে তোলার পরিবর্তে ঠেলে ফেলে দিন।৩. হুল ফোটানোর পর সেই স্থানটিতে গরম লেগে জ্বালা করে এবং লাল হয়ে ফুলে যায়। তাই প্রভাবিত স্থানে সবার আগে বরফ ডলুন।৪. কিছুক্ষণ ঠান্ডা শেঁক দেওয়ার পর সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম লাগান।৬. ক্রিম লাগানোর পাশাপাশি অ্যান্টি হিস্টামিন ওষুধ খান। ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল তো রয়েছেই।৭. হুল ফোটানোর কারণে অনেকের মাথা ব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট হয়। আবার প্রভাবিত স্থান চুলকাতে পারে, চাকা হয়ে ফুলে যেতেও পারে। এমনকি শরীর ফুলে যাওয়া ও পেটে তীব্র ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।**এছাড়াও কিছু ঘরোয়া উপায়ও আছে। যাঁদের অবস্থা গুরুতর নয় এবং ওষুধ খেতে চাইছেন না, তাঁরা এই উপায় অবলম্বনে স্বস্তি পেতে পারেন—১. মৌমাছি কামড়ালে তুলসি পাতার রস, ইউক্যালিপটাস তেল লাগালে স্বস্তি পাবেন। আবার অ্যালোভেরা জেলও শীতলতা প্রদান করতে পারে। অ্যালোভেরায় উপস্থিত অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ব্যথা, চুলকানি, ফোলা ও জ্বালা ভাব কম করে।২. বেকিং সোডা ও অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তার পর ওই পেস্টটি প্রভাবিত স্থানে লাগান। বেকিং সোডা না-থাকলে শুধু অ্যাপেল সিডার ভিনিগার লাগাতে পারেন। এই ভিনিগার বিষের অ্যাসিড নিষ্ক্রিয় করার পাশাপাশি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তুলোয় ভিজিয়ে এই ভিনিগার ক্ষত স্থানে লাগাতে পারেন।৩. মৌমাছি কামড়ালে ওই জায়গায় মধু লাগান। মধু বিষকে তরল করে দেয়। মধুতে উপস্থিত অ্যান্টি ব্যাক্টিরিয়াল উপাদান সংক্রমণের ঝুঁকি কম করে। সামান্য মধু লাগিয়ে তা শুকোতে দিন। তার পর ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলুন। হলুদ ও মধু এক সঙ্গে মিশিয়েও লাগানো যেতে পারে।৪. চন্দন ও হলুদ গুড়োও মৌমাছি, বোলতার কামড়ের কার্যকরী উপায়। চন্দন জ্বালা ভাব শান্ত করে, আবার হলুদ চুলকানো ও ফোলা ভাব কমায়। চন্দন ও হলুদের পেস্ট প্রভাবিত স্থানে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।**************************বি,দ্রঃ এই গ্রুপের পোস্ট ভালো লাগলে গ্রুপটিকে লাইক করুন, ফলো করুন। আরো নতুন নতুন পোস্ট দিতে উৎসাহ দিন।*************************তথ্যসূত্র : বি কালচার ডট কম, আর্থ স্কাই ডট অর্গ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *