ভাষা শেখা মজার খেলা।।
আকলিমা আক্তার
বিভাগীয় প্রধান,
বাংলা বিভাগ আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ
সাবেক শিক্ষার্থী-জাপানি ভাষা বিভাগ
ফোন : ০১৯১২১৫২০৫৫
ই-মেইল : aklimaakter301@yahoo.com
![](https://shikkhokerkolam.com/wp-content/uploads/2022/03/a.jpg)
লেখার শিরোনাম দেখে মনে হচ্ছে কোন বাচ্চার মনের অনুভূতির প্রকাশ।ক্ষুদ্র একঅদৃশ্য শত্রু যখন বিশ্ব সভ্যতাকে ধ্বংস করার তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে, তখন জীবনের সব কিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। ঠিক স্থানে আর কিছু নেই। কত আনন্দ আর আশার প্রদীপ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকীপিতউদযা হবে। মহা ধুমধাম, আনন্দজজ্ঞের আয়োজন ছিলো। কিšদ হঠাৎ পৃথিবী থমকে গেলো। সব কিছু বিমর্ষ, ম্লান হয়ে মানবসভ্যতার জীবন আটকে গেলো, গৃহবন্দী হলোহাতে অফুরন্ত সময়। ক্ষণ কাটানোর জন্য কিছু না কিছু লিখি তাই যখন জানলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অ্যালামনাই এসোসিয়েশন থেকে প্রকাশনায়্রকাশেরপ জন্য লেখা-আহ্বান করা হয়েছে, একটু স্মৃতিচারণ করার চেষ্টা করি।
মাতৃভূমি, মাতৃভাষা তিনটিশব্দ মাত্রই হৃদয়ে লালন করে পরম শ্রদ্ধায়আর এ তিনটি শব্দ এমন একটি বর্ণ ‘ম’ দিয়ে গঠিত যার শরীরমমতায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ। নিজের ভাষাকে আমরা শিখতে পারি খুব সহজেই। পর ভাষা বা বিদেশি কোন ভাষাকে আমরা আয়ত্বে আনার জন্য প্রয়োজন বিশেষ কোন মুন্সিয়ানা, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা। কতটামজাআর দুষ্টামির মধ্য দিয়ে আনন্দ দায়ক করে শেখা যায়, সে বিষয়ে দু-একটি কথা বলে আমার স্মরনীয় করে রাখার এ পাচালির ইতি টানবো।
জাপান এশিয়া মহাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধশালীবাংলাদেশের বন্ধু প্রতীম একটি দেশ সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। জাপানিদের আপ্রাণ চেষ্টা দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিবে কিভাবে। সেই প্রচেষ্টাকেআরও কাছ থেকে দেখার কৌতূহলে২০০৪ সালে ভর্তি হয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে। ভর্তির আগে শুনেছি ওখানকার১৪টি ভাষার
মধ্যে সবচেয়ে কঠিন নাকি জাপানি ভাষা। আমার আগ্রহআরও বেড়ে গেলো কাজটা কঠিন দেখিই না একটু চষ্টাে করে।
ভর্তি পরীক্ষা দিলাম কিভাবে যেন উত্তীর্ণ য়হভের্তির সুযোগ হয়ে গেলো। একে, একে, জুনিয়র, সিনিয়র, ডিপ্লোমা, উচ্চতর ডিপ্লোমা উত্তীর্ণ হয়ে গেলাম একেবারেই।ঔখচঞ ০৪ এবং ০৩ ও পাশ করলাম।
২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট কলেজ ফেরত খোজিমা স্যারের ক্লাশে প্রথম প্রবেশ করেছিলাম শাড়িপরা ছিলাম তাই শিক্ষার্থীরা উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানালো আমি একটু দেরিতে প্রবেশ করেছিলাম, ভাবলাম এটা মনে হয় জাপানি রীতি। পরে জেনেছি ওরা ভেবেছে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাশ পরিদর্শনেগিয়েছি অবস্থা দেখে স্যারও কিছুটাবিব্রত। এত বেশি বয়সে কেউ আবার বিদেশী ভাষা শিখে নাকি ভর্তি পরীক্ষার সময় ক্লাশের সময়সূচী পছন্দ করেছিলাম তাই আমার গ্রুপের ক্লাশ করেছিখাজিমাে স্যারের। এই বর্ণনা লিখছি জুনিয়র কোর্সের। আমার মনে হয় স্যারের সারা দিনে ঐ একটি ক্লাশ করা ছাড়া অন্য কোন কাজ ছিলোনা, ক্লাশের আগেই বোর্ড লিখে ভরে খরাতো। আর আমি কলেজ ফেরত শ্রেণিকক্ষে প্রবেশে দেরি হয়ে যেতো।
কঠিনেরে অতি সহজে কিভাবে ভালবেসে মনে রাখা যায় তাই দেখা যাক। “ও হাইঅ গজাই মাস” (ঙ ঐধর এড়লরসধংঁ) অর্থসু-প্রভাত। পরে আমরা আমাদের মতো করে বললাম “ও হায়! গজার মাছ।” বেলা ১২ টার পর এর পরিবর্তন আসে এভাবে কোন নিচুয়া। (কঁহহরপযঁধ) ইংরেজিতে যাকে বলে এড়ড়ফ অভঃবৎহড়ড়হ আর তাই হয়ে গেলো কনুই চুয়াইয়া।স্যারের নামটিও বেশ মজার কঁলরসধ খোজিমা আমার খুঁজিমা বানিয়ে একেবারে মাকে খুঁজতে বের হয়েগলাম,ে বাংলা ‘সহজ’ শব্দটি যখন স্যার (কধহঃধহ) কানটান এভাবে লিখলেন তখন ক্লাশ থেকে বের হয়েশিক্ষার্থীরাএকে অপরের কান ধরে টানাটানি শুরু করলো। স্যার (কধনধহ) এই শব্দটি লিখে মুখে বললেনএর অর্থ হল ‘বাঘ’। স্বভাবতই আমরা মনে করলাম বাংলাদেশের রয়েলবেঙ্গল টাইগার। লেখা শেষে যখন বাস্তবউপকরণ হিসেবে স্যারের কাঁধের ঝোলানো ব্যাগটি দেখালেন তখন আর হাসি কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি।
(কধহধৎধলঁ) (কানারাজু) অর্থ হল যে কোন উপায়ে আমরাওভাবলাম আমাদের যে এক চোখ নষ্ট রাজুকেখুঁজে পেতেই হবে“যে কোন উপায়ে”। ঙশরসঁংঁ (ও কিমাসু) অর্থ উঠা মনে রাখছি এই বলে “ও কি মাছ”? গড়ৎধরসঁং (মরাইমাস) কাউকে উপহার দেয়া। অমবসঁং (আগেমাস) আমরা মুখস্থ করলাম আগে মরা মাছ কাউকে উপহার দিয়েই শুভেচ্ছা জানাবো। ঘরংযর (নিশি) পশ্চিম, আমরা রাতের সামর্থক শব্দ হিসেবেব্যবহার করি। আর আমাদের গ্রুপে সুন্দর মেয়ে আছে নিশি নামে। আমরা গাইতে লাগলামনিশি রাত বাঁকা চাঁদ পশ্চিম আকাশে। মনে না থাকার কোন কারণ নেই। ঐরলধৎধ (হাইজারা) ছাইদানি। জারাকে হাই বলে অভিনন্দন/ শুভেচ্ছা জানিয়ে সিগারেটের ছাই ফেলতেই শিখে গেলাম।
জাপানিরা হাত দিয়ে কখনও ভাত খায় না। দুটি কাঠির সাহায্যে সে কাজটি করে থাকে। একসাথে কাঠি দুটিকে বলেঐধংর (হাসি)। যদি বলা হয় জাপানিরা কি দিয়ে ভাত খায়। হাসি দিয়ে এটা কিšদ অন্য ভাষাভাষিদের হাসি নয়। চধহ ঞধসধমড় (পান-তামাক) পাশাপাশি দুটি শব্দ এর অর্থ রুটি-ডিম এর পর ক্লাশে গেলেই বলা হতো সকালে কি খেয়েছি উত্তর আসতো পান-তামাক। জাপানিরা পান-তামাক দিয়ে নাস্তা করলেও আমাদের দশেে নাস্তার টেবিলে পান-তামাক থাকলে কি হবে বুঝতেই পারছেন।কযরৎধর (খিরাই) অপছন্দ করা বাংলাদেশের সুস্বাধু সালাদকে আমরা অপছন্দ করেই মনে রাখলাম।ঞধশধু (তাকাই) অর্থ লম্বা এবং দামি আমরা মনে রাখছি লম্বা মানুষটিরদিকে তাকাতে পারি না, তিনি দামি লোক। আর বেশি দূর এগোলে মনে হয় ভাষা শেখার মজা হয়ে যাবে বিরক্তিতে পরিপূর্ণ। তাই স্মরণীয় করে রাখার লেখাটি জাপানি ভাষার একটি বাক্য দিয়েই শেষ করতে চাচ্ছি।
“ঘওঐঙঘ এঙ ডঅ গঙঔটকঅঝও উঊঝ এঅ, অগঙণ ঝওজঙণ উঊঝঐ”
(নিহোন গো ওয়া মজুকাশি দেশ গা অমোই শিরোই দেশ) “জাপানিজ ভাষা কঠিন, কিšদ
মজার” সত্যিই তাই।