সৃজনশীল লেখা(চিঠি) “কবিতা”।।

পরম পূজনীয়েষু পিতা,
টাংগাইল, ১১-০৩-২০২২ ইং

প্রথমে আমার ভক্তিপূর্ণ প্রনাম গ্রহণ করিও।আশাকরি সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপা আর করুণায় কুশলেই আছো। আমিও সৃষ্টিকর্তার কাছে তোমার কুশল ও সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা করি। কয়েকদিন আগে দেখে এসেছি, তুমি খুব অসুস্থ্য। তাই তোমার জন্য মনটা বিচলিত হয়ে আছে। তুমি আমাকে বলেছিলে ,গিয়ে তোমাকে যেন আমার কাছে নিয়ে আসি। কিন্তু কর্মের ব্যাস্ততায় তোমার কাছে যেতে পারছি না। মনে পরছে অনেক কথা,আনেক পুরানো স্মৃতি। বাবা, তাই মনের মাধুরী মিশিয়ে সেই কথাগুলো লিখছি।
লিখতে বসেই হারিয়ে গেলাম শৈশবে। আমাকে ভীষণ ভালবাসতে তুমি। সব সময় মা বলে ডাকতে। মনে পরে বাবা,ঝালকাঠি গঞ্জে গিয়ে তুমি আমার জন্য এক মুঠো লালা চুড়ি এনে দিয়েছিলে? আমি পরম যত্নে চুড়িগুলো পরেছিলাম তিন বছর। পড়াশুনায় ভালছিলাম বলে তুমি সর্বদা আমাকে প্রেরণা যোগাতে। তুমি কলেজের শিক্ষক ছিলে।আমরা গ্রামে থাকতাম ,আর তুমি অনেক দূরে থাকতে। বাড়িতে গেলেই আমার পড়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা গুলো থাকত তা নিজে সমধান করে দিতে ।আমার কোন গৃহ শিক্ষক লাগেনি,কারণ তুমি ও মা ছিলে আমার কাছে আদর্শ শিক্ষক।
আমি খেলাধূলায় ভাল ছিলাম। তবুও বাবা, তোমার কি মনে আছে তুমি নিজে আমাকে দীর্ঘলম্ফ শিখাতে? আর,বড় দাদাদের সাথে দৌড় অনুশীলনে সাহায্য করতে, যাতে আমি খেলায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। আমি তোমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছিলাম ১৯৮২ সালে(১২-১৬ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের ) মহাকুমায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে। শিক্ষাক্ষেত্রে আমার একের পর এক ভাল ফলাফল তোমাকে গর্বিত করেছে। আরো অনেক স্মৃতি আজ স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে।
কিন্তু বাবা,তখন বুঝিনি তোমার ও মায়ের সব চাওয়া-পাওয়া তুচ্ছজ্ঞান করে আমাদের চাহিদা মিটিয়েছো। আমাদের ভাল রাখতে চেয়েছো।ভালো একটা জিনিস নিজেরা খাওনি, পরনি। এখন অনুভব করি, কারণ এখন আমারও সন্তান আছে। এখন তুমি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছো। অনেকটা সময় অসুস্থতায় কাটাও। এখন প্রয়োজন তোমাকে নিজ সন্তান জ্ঞানে ভালবাসা ,পরিচর্যা করা , সময় দেওয়া। কিন্তু কি কঠিন বাস্তবতা! আমরা ব্যাস্ত নিজ নিজ কর্ম আর সন্তানদের নিয়ে। বাবা-মা সময় দেওয়ার সময় আমরা পাই না। কি কঠিন সত্যের মুখোমুখি সবাই।
বাবা,তুমি চিন্তা করনা। আমি খুব তারাতারি তোমাকে নিয়ে আসব। আমার সন্তানদেরর যেমন করে খেয়াল রাখছি ,তেমন ভাবেই তোমাকে আগলে রাখব। শুনেছি বৃদ্ধ হলে মানুষ শিশুর মত হয়ে যায় । তোমার কাছে গিয়ে আমি তা অনুভব করলাম। যে বায়না আগে আমি তোমার কাছে করতাম সেই আবদার এখন তুমি আমার কাছে করছো। বাবা ,এতো আমার সৌভাগ্য হবে যদি তোমাকে সন্তানের মত লালন-পালন করতে পারি। আমি তোমাকে নিজ হাতে স্নান করিয়ে দেব। তোমাকে ভাত মেখে খাইয়ে দেব। ঔষধ খাইয়ে দেব। সঠিক পরিচর্যা করব ।তোমার সাথে গল্প করব। তোমার মন আনন্দে ভরিয়ে রাখব। তোমাকে কোন কষ্ট পেতে দেব না। আমি চাইনা কোন বাবা-মা শেষ বয়সে কষ্ট পাক। বাবা ,কত কথাই তো মনে পরছে।তোমার ত্যাগের কথা ভেবে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। তোমার কথা ভাবতে ভাবতে অনেক রাত হয়ে গেল। কাল আবার কর্মস্থলে যেতে হবে। জানি এখন তোমার রাতে ভাল ঘুম হয় না।হয়তো জেগে আছো। হতো তুমিও তোমার কবি-মা কে নিয়ে ভাবছো। আমার দুঃখ বেদনা গুলো তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে। বাবা ,আমাকে নিয়ে ভেবনা। অনেক ভেবেছো । এখন আমি ভাববো তোমাকে নিয়ে। তোমাদের ভাল রাখতে পারলেই সন্তান হিসেবে আমি শান্তি পাব।তোমাকে শুশ্রূষা করার সুযোগ পাওয়া আমার জীবনে পরম পাওয়া। এখন ঘুমিয়ে পর,আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
মাকে প্রতি রইল আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম। বাড়ির অন্যান্য সবাই কেমন আছে। শ্রেণিভেদে সকলকে আমার প্রণাম ও ভালবাসা জানাবে।আজ আর নয়। আমি শীঘ্রই আসছি তোমাকে নিতে। সেই পর্যন্ত ভাল থেকো। মাকে চিঠির উত্তর দিতে বলো।
ইতি তোমারই স্নেহাস্পদ মেয়ে “কবিতা”

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *